বাংলাদেশে ভোজ্য তেলের চাহিদা মেটাতে তেলজাতীয় ফসলের মধ্যে প্রধান ভূমিকা রাখে সরিষা এবং আংশিক সূর্যমুখী। স্বাধীনতাপূর্ব দেশে উৎপাদিত সরিষার তেলই ভোজ্য তেলের সিংহভাগ চাহিদা পূরণ করতো। সরিষার তেল ছিল বাঙালীর ঐতিহ্যের একটা অংশ এবং সরিষা চাষে এ দেশের কৃষকেরা ছিল অত্যন্ত অভিজ্ঞ। পরবর্তীতে দেশে উফশী বোরো ধানের আবাদ বাড়তে থাকায় সরিষার আবাদ কমতে থাকে। সেইসাথে সরিষার তেলে বিদ্যমান ইরুসিক এসিড নিয়ে ভোক্তাদের মাঝে এক ধরণের ভ্রান্ত ধারণার সৃষ্টি করা হয়। এ সুযোগে সরিষার তেল বাদ দিয়ে মানুষ সয়াবিন তেলের দিকে বেশী ঝুঁকে পড়ে। যদিও একটা স্বাস্থ্যসম্মত ভোজ্য তেলে যে সমস্ত গুণাগুণ থাকা দরকার যেমন-সম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিডের পরিমাণ শতকরা ৩০ ভাগের নীচে থাকা, অসম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিডের পরিমাণ শতকরা ৫০ ভাগের উপরে থাকা এবং ওমেগা-৩ ও ওমেগা-৬ এর অনুপাত ১:২ থাকা এগুলো সবই সরিষার তেলে বিদ্যমান। এছাড়া এ তেলের রয়েছে উচ্চমাত্রার স্মোক পয়েন্ট ২৪৯0c (যে তাপমাত্রায় তেল থেকে ধোঁয়া উঠে এবং তেলের গণাগুণ নষ্ট হয়) যা তেলের গুণাগুণ রক্ষা করে। বেশী তাপমাত্রায় রান্নার জন্য সরিষার তেল উপযোগী এবং রান্নায় এ তেল কম লাগে বিধায় তেল সাশ্রয় হয়। দেশে ভোজ্য তেলের চাহিদা মেটানোর জন্য প্রধান এ তেল ফসলটির আবাদ এবং উৎপাদন বৃদ্ধি জরুরী হয়ে পড়েছে। অত্যন্ত আশার কথা যে, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর তেল ফসলের উপর যুগোপযোগী প্রকল্প নেয়ার ফলে বর্তমানে ভোজ্য তেল হিসাবে সরিষার তেল জনপ্রিয় হচ্ছে এবং এর চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে ২০২১-২২ অর্থ বছরে দেশে ৬.১০৬ হেঃ জমিতে ৮.২৪৩ লক্ষ মে.টন সরিষা উৎপাদিত হয়েছে।
Leave A Comment